‘পিকনিক’ (Picnic) শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে বাঙ্গালীদের নস্টালজিয়া। শীতকালে সপ্তাহের শেষে বন্ধুবান্ধব, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, অফিস কলিগ, পাড়া প্রতিবেশী সকলকে নিয়ে সুস্বাদু খাবার খেয়ে, হইহুল্লোড় করে, নাচানাচি করে ‘পিকনিক’ করার মজাই আলাদা। কি ভাবছেন? শীত তো শেষের দিকে! এখনই সেরে ফেলতে পারেন ছোট্ট করে একটি ‘পিকনিক’। পিকনিক না হলেও কলকাতা থেকে মাত্র একদিনে ঘুরে (Travel) আসা যায় এই ১২ টি জায়গার যে কোনো জায়গা থেকে অনায়াসেই।
আর কতদিন বন্ধুর বাড়ির ছাদে, খেলার মাঠে?
এইতো করে ফেললেন ভুল চিন্তাভাবনা! বাড়ির ছাদে, খেলার মাঠে, পাশের পাড়ায়, বন্ধুর বাড়ি তো অনেক হল। দিন না মনকে একটু আলাদা করে উড়তে ঘুরে আসুন এক-টু দূর থেকে। কি ভাবছেন? কোথায় যাবেন? আরে আমরা আছি আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে! মাত্র একদিনে ঘুরে আসা যায়, এমন বেশ কয়েকটি চেনা অচেনা পিকনিক স্পট কলকাতার খুব কাছেই রয়েছে (Picnic spots near Kolkata for one day travel)।
তবে জেনে নেওয়া যাক!

১) বাওয়ালি
নামটা কি শোনা মনে হল? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী এবং অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ডেস্টিনেশন ম্যারেজ হয়েছে এখানেই। এরপর থেকেই এটি এখন বেশ জনপ্রিয় স্থান। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নোদাখালিতে অবস্থিত এই রাজবাড়ি, কলকাতা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। রাজবাড়ির ভিতরে পিকনিক (Picnic) বা সময় কাটানোর বিভিন্ন প্যাকেজ আছে। এমনকি চাইলে সেখানে এক দুই রাত্রি থাকতেও পারেন। সমস্ত রকম ব্যবস্থাই আছে সেখানে।
রাজবাড়ির অফিসে যোগাযোগ করলে তাঁরাই বিভিন্ন প্যাকেজ সম্পর্কে বলে দেবে। আয়োজনও তাঁরা করে দেবেন। সঙ্গীদের নিয়ে আপনি শুধু রাজার হালে আনন্দ করে যাবেন। সপ্তাহান্ত কাটানোর জন্য এটি একটি সুন্দর স্থান। নিরিবিলিতে ভালোই লাগবে। তবে রাজবাড়ির ভিতরে কিছু নিয়ম রয়েছে। সেগুলি মেনে চলতে হবে। সেখানকার কর্মীরাই সে সম্পর্কে আপনাদের জানিয়ে দেবেন। আর হ্যাঁ, এখানকার খাবারের স্বাদ কিন্তু অসাধারণ। আমিষ নিরামিষ যাই খান না কেন তার আয়োজন দেখেই মন ভরে যাবে।
যোগাযোগের জন্য নাম্বার – 033 4180 0305
সরাসরি বুকিং করতে ও সব ধরনের তথ্যের জন্যে দেখে নিন রাজবাড়ির ওয়েবসাইট – therajbari.com
২) বাবুর হাট
সময়ের সাথে সাথে বাবুর হাটের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কারণটা আর কিছুই নয়, ইট, কাঠ, পাথরের শহরের থেকে দূরে দু’দণ্ড শান্তির নিশ্বাস। গ্রাম্য পরিবেশে ঘণ্টা কয়েক কাটানোর আদর্শ জায়গা এই বাবুর হাট। কলকাতা থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বাবুর হাটের দূরত্ব প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। খুব বেশি হলে দুই ঘণ্টা লাগবে সেখানে পৌঁছোতে। বাসন্তী হাইওয়ে ধরে যাওয়া সবথেকে সোজা। পাশেই মালঞ্চ গ্রাম অবস্থিত। সবুজ ধানের খেত, পুকুর, গাছপালার মাঝে মন শান্ত হয়ে উঠবে। যে কোনও সাহায্যের জন্য গ্রামের লোকেরা সদা প্রস্তুত।

৩) রায়চক
নদীর ধারে পিকনিক (Picnic) – এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে! তারপর নদীটি যদি আবার গঙ্গা হয়। তবে চলুন রায়চক। এখানে পিকনিক করতে গেলে গঙ্গাকে সবসময় পাশেই পাবেন। ভাগীরথী-হুগলি নদীর গা ঘেঁষে থাকা রায়চক পিকনিক ম্যানিয়াকদের কাছে ভীষণ প্রিয় জায়গা। ভয় হচ্ছে তাহলেতো এখানে বড্ড ভিড় হবে। ভয় নেই স্থানটি অনেক বিস্তীর্ণ যে কারণে বেশি লোক থাকলেও ভিড় বোঝা যায় না। এখানে রায়চক দুর্গ, এছাড়াও অনেক কয়েকটি ঘোরার জায়গা রয়েছে, আছে বিলাসবহুল অভিজাত রিসর্ট যার গ্ল্যামারই আলাদা। অবসর যাপনের দারুণ ঠিকানা। এক কিংবা দেড় দিনের জন্য এখানে সময় কাটিয়ে যাওয়াই যায়। কলকাতা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার।
৪) ব্যারাকপুর
কলকাতা থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্যারাকপুর। এটি উত্তর ২৪ পরগণার সদর শহর, কলকাতা থেকে একে আলাদা করা একটু কঠিন। কিন্তু তাতে কি যায় বা কি আসে, এখানে যে অসাধারণ স্পটগুলি পিকনিক (Picnic spot) আছে তা বলাই বাহুল্য। বারাকপুর শহরটিই একটি দর্শনীয় স্থান সিপাহী বিদ্রোহর সূচনা হয়েছিল এই শহরে। এখানকার মঙ্গল পাণ্ডে ঘাটটি সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হযেছে। রাস্তাঘাট ঝকঝকে। কাছেই আছে অন্নপূর্ণার মন্দির।

৫) ফলতা
হুগলি, ডায়মন্ডহারবার এবং রূপনারায়ণের মিলনস্থল হল ফলতা। কলকাতা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫৩ কিলোমিটার। এখানকার সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপূর্ব রূপ দেখতে অনেকেই ভিড় জমান। শীতকালে এই দৃশ্যের সৌন্দর্য্যই আলাদা। নদীর ধারে মজা করে পিকনিক (Picnic) করা যায়। তবে অবশ্যই পরিচ্ছন্নতার দিকটি খেয়াল রাখতে হবে। সারাটা দিন কীভাবে কেটে যাবে টেরই পাবেন না।
৬) ডায়মন্ড হারবার
ডায়মন্ড হারবার বোধ হয় কলকাতার কাছের বেশ পুরোনো পিকনিক স্পটগুলির (Picnic spot) মধ্যে একটি এবং সবচেয়ে জনপ্রিয়ও বটে। দুই আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই এখানে পৌঁছোনো যায়। গঙ্গার ধারে রান্নাবান্না খাওয়া দাওয়ার আনন্দই আলাদা। গঙ্গা এখানে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিশেছে। এখানে পিকনিক করার নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে।
৭) দেউলটি
দেউলটিতে রয়েছে একটি সুন্দর খামারবাড়ি। আর সেখানেই রয়েছে পিকনিক (Picnic) করার যাবতীয় ব্যবস্থা। এখানে রয়েছে প্রচুর নারকেল গাছ সঙ্গে গ্রামের প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ইচ্ছে হলেই ডাবের জল খেতে পারবেন, পুকুরে মাছ ধরতে পারবেন, গ্রাম ঘুরতে পারবেন আর পাবেন বিশুদ্ধ বাতাস। পিকনিক স্পট থেকে কাছেই রয়েছে কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি। এছাড়া রাধা এবং মদনগোপাল মন্দির দেখতে পাবেন যা পোড়ামাটির কাজ দিয়ে সজ্জিত। এই আটচালা বা আট ছাদের মন্দিরটি ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গলহাট পরগনার জমিদার মুকুন্দপ্রসাদ রায়চৌধুরী তৈরি করেছিলেন। কলকাতা থেকে দেউলটির দূরত্ব ৬৩ কিলোমিটারের সামান্য বেশি।

৮) টাকি
ইছামতি নদীর ধারে অবস্থিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিমছাম ছোট্টো শহর টাকি। আর বাঙালির প্রিয় পিকনিক স্পট (Picnic spot)। বর্ষা বাদে যখনই জান টাকি সবসময়ই সুন্দর আর মনোরম। কলকাতা থেকে মাত্র ৬৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টাকির ইছামতি নদীর ওপারেই রয়েছে বাংলাদেশ। নৌকা করে প্রতিবেশী দেশে খানিকটা কাছাকাছি ঘুরে আসতেই পারেন। কয়েকজন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাগরিকের সঙ্গেও দেখা বা কথা হয়ে যেতে পারে। এখানে হোটেল রিসর্ট সবই আছে। প্রয়োজনে সপ্তাহান্ত কাটানো যায় আরামসে।
৯) পিয়ালি দ্বীপ
পিয়ালি নদীর ধারে পিয়ালি দ্বীপটি বড় সুন্দর। সারাটা দিন বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে হই হই করে দিন কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা। চারদিকে প্রকৃতির সৌন্দর্য যেন আপনাকে হাত বাড়িয়ে ডাকবে। পিয়ালি দ্বীপের কাছেই আছে সুন্দরবন টাইগার ক্যাম্প। পিকনিকের (Picnic) মাঝে সেখানে গিয়ে বাঘ মামাকেও দর্শন করে আসতে পারেন। জঙ্গলের মাঝে পিয়ালি দ্বীপে একবার অন্তত ঘুরে আসা উচিত। আনন্দ, অ্যাডভেঞ্চার, খাওয়া দাওয়া সবই হবে একত্রে।
১০) গাদিয়ারা
কলকাতার খুব কাছে আরেকটি অপূর্ব সুন্দর পিকনিক স্পট (Picnic spot) হল গাদিয়ারা। এটি একেবারে নিরিবিলি স্থান, নৌকাবিহার থেকে প্রকৃতি দর্শন সবই হবে। এখানে যদি পিকনিক করেন মাছও কিনতে হবে না। অন্যদিকে সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি পেয়ে যাবে বেশ কম দামে আর একেবারে টাটকা। প্রকৃতির কোলে বসে টাটকা মাছ আর নরম গরম পানীয় আহা কি সুখ। কলকাতা থেকে গাদিয়ারার দূরত্ব প্রায় ৭৯ কিলোমিটার।

১১) মাছরাঙা দ্বীপ
এখানে দেখতে পাবেন প্রচুর মাছরাঙা পাখি। ইছামতি এবং ভাসা নদীর মাঝেই রয়েছে এই দ্বীপটি আর এর খুব কাছেই রয়েছে বাংলাদেশ। তবে দ্বীপের নাম মাছরাঙ্গা বলে মনে করবেন না শুধু মাছরাঙ্গা পাখি দেখতে পাবেন, এখানে বহু প্রজাতির পাখিই বাস করে। শীতকালে আসে পরিযায়ী পাখিরাও। টাকি কিংবা হাসনাবাদ থেকে মাছরাঙা দ্বীপ সহজেই যাওয়া যায়। সারাদিন এই দ্বীপে আনন্দ করে কাটান। প্রচুর খাওয়া দাওয়া করুন। সূর্যাস্ত দেখে বাড়ির পথে রওনা হোন।
১২) ফ্রেজারগঞ্জ
সুন্দরবন ব-দ্বীপের খুব কাছেই অবস্থিত ফ্রেজারগঞ্জ। পিকনিক (Picnic) করার উপযোগী জায়গা এটি। নৌকায় ভেসে এখানকার সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখায় অনুভূতি একেবারেই আলাদা। ইচ্ছে হলে সারাটা দিন জলেই কাটাতে পারেন। কলকাতা থেকে এখানে পৌঁছোতে সময় লাগে ঘণ্টা তিনেক। এখানে একবার আসলে আর বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করবে না।
যাক তবে দেরি না করে ঘুরে ফেলুন শীঘ্রই। কোনো অসুবিধেয় পড়লে বা কোনো তথ্যের প্রয়োজনে কল করুন পশ্চিমবঙ্গ টুরিজম ডেভেলপমেন্ট কার্পোরেশন এর হেল্পলাইনে- 18002121655 অথবা দেখুন তাদের ওয়েবসাইট- www.wbtdcl.com
এই রকম আরো খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।