শরীরে এমন অনেক সময় কিছু রোগ বাসা বাঁধে যা ভবিষ্যতে মারণ রোগ হিসাবে দেখা দেয়। তেমনি একটি রোগ হল ওভারিয়ান ক্যান্সার (Ovarian Cancer), যা বর্তমান যুগেও অনেকাংশে নিরাময় করা দুষ্কর হয়ে উঠতে পারে অনেকক্ষেত্রে। বিশ্বের বড় বড় চিকিৎসাবিদরা এর উত্তর খোঁজার জন্য সদা ব্যস্ত হয়ে রয়েছেন। মহিলাদের দেহে যে সমস্ত ক্যান্সার বাসা বাঁধে তার মধ্যে ওভারিয়ান ক্যান্সার অন্যতম। বর্তমান যুগে এই ওভারিয়ান ক্যান্সার কোন বিরল রোগ নয়। তবে, সঠিক সময় শনাক্ত করা গেলে এই মারণ রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
সূচিপত্র (Table of Contents)
ডিম্বাশয়ের কাজগুলি কি কি? (Functions of the Ovary)
মহিলাদের দেহে সন্তান ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ডিম্ব উৎপাদন হয় Ovary বা ডিম্বাশয়ের মধ্যে। নারী দেহের জরায়ুর দুপাশে থাকে দুটি ডিম্বাশয়। প্রজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এই ডিম্বাশয়। এর থেকেই বোঝা যায় ডিম্বাশয়ে যে কোন অসুখ শরীরে দানা বাঁধলে তাতে জীবন ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে আর সে অসুখ যদি ওভারিয়ান ক্যান্সার (Ovarian Cancer) হয় তবে তা সত্যিই আতঙ্কের।

যে ৪ ধাপে ওভারিয়ান ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে (How Ovarian Cancer Spreads)
- একটি বা উভয় ডিম্বাশয় ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- ওভারি থেকে তলপেটের আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে ক্যান্সার।
- পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়ে এরপরে এই মারণ রোগটি।
- সবশেষে এটি ছড়িয়ে পড়ে সারা দেহে।
ওভারিয়ান ক্যান্সার শনাক্তকরণের প্রাথমিক উপায় (Identification and Symptoms of Ovarian Cancer)
- যতক্ষণ না পর্যন্ত পেলভিক জোন (Pelvic Zone) ও পেটে ওভারিয়ান ক্যান্সার না ছড়িয়ে পড়ে ততক্ষণ রোগী বুঝতে পারে না তিনি এই রোগে আক্রান্ত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথাহীন হওয়ায় শনাক্তকরণে অনেক দেরি হয়ে যায়। তবে কিছু লক্ষণের উপর নজর দেওয়া গেলে সহজে শনাক্তকরণ করা সম্ভব এই রোগের। সেগুলি নিম্নলিখিত
- ডিম্বাশয় ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হল দীর্ঘদিন কোমরের নিচে চিনচিনে ব্যথা।
- হঠাৎ করে খিদে কমে যাওয়া এই মারণ রোগের একটি লক্ষণ হতে পারে।
- ডিম্বাশয় টিউমার ফুলে গিয়ে পেট অন্ত্র ব্লাডার বা মুত্র থলিতে চাপ পড়তে থাকে যার ফলে অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মত সমস্যায় প্রায়শই ভুগতে থাকেন রোগী। এরকম সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
- অনিয়মিত মাসিক ওভারিয়ান ক্যান্সারের একটি বিশেষ লক্ষণ। যোনিপথে হঠাৎ রক্তপাত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
- হঠাৎ অত্যাধিক ওজন কমে যাওয়া, পেলভিস এরিয়ায় যন্ত্রণা, ঘনঘন স্রাব, যোনিপথের আশেপাশে চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া বা ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া এই রোগের একটি লক্ষণ।
- ওভারিয়ান ক্যান্সারের আরেকটি লক্ষণ দীর্ঘ সময় ধরে পেটে যন্ত্রণা এবং সাদা স্রাব নিঃসরণ।
আরও পড়ুন -> আপনার কি PCOD রয়েছে? নিয়মিত পিরিয়ড হয় না? এর সমাধান কি?
ওভারিয়ান ক্যান্সারের কারণ (Ovarian Cancer Reasons)
একাধিক গর্ভধারণ, অল্প বয়সে গর্ভধারণ, গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবন, অনিয়মিত মাসিক এই মারণ রোগের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকরা। আবার বিশেষ ধরনের কিছু ওষুধ সেবনেও এই রোগ ডেকে আনে। ডিম্বাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় হরমোনাল চিকিৎসাও। মেনোপজ এর আগে শরীরে বর্ধিত ওজন এই রোগ ডেকে আনে। গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে, পরিবারে কারো ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হিস্ট্রি থাকলে অন্যদেরও এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
শনাক্তকরণ পরীক্ষা (Ovarian Cancer Diagnosis)
সঠিক সময় ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে পাঁচ বছরে ৯০% সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে রোগীর। যে সকল পরীক্ষারর মাধ্যমে এই ওভারিয়ান ক্যান্সার শনাক্ত করা যায় সেগুলি হলো আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানিং, সিরাম টিউমার মার্কার টেস্ট, ল্যাপারোস্কোপি, রক্ত পরীক্ষা, ইমিউনোলজিক্যাল টেস্ট।
চিকিৎসা এবং প্রতিকার (Ovarian Cancer Treatment)
প্রাথমিক কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক। কেমোথেরাপি অথবা রেডিয়েশন কতটা পরিমাণে কার্যকর সেটি অনকোলজিস্ট (Oncologist) বলতে পারবেন রোগটি শনাক্তকরণের পরে। বেশি ঝুঁকি সম্পন্ন রোগীর ক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং ওভারি অপসারণ একটি কার্যকরী প্রক্রিয়া। এই রোগের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য, আক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট এবং জীবন সংগ্রাম সাথে তার পরিবারের প্রচেষ্টাকে স্বীকার করার জন্য বিশ্বজুড়ে ৮ ই মে বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়। ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে ভেঙে না পড়ে অবিলম্বে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন -> Infertility Treatment: বন্ধ্যাত্ব – কিভাবে হবে সঠিক চিকিৎসা?
এইরকম আরও খবর পেতে চোখ রাখুন বেঙ্গলি নিউজ ৩৬৫ এর পাতায়।